
সন্ধ্যাপার পরিণত রাত এখন,
ফেরার পথে- ছুটাছুটি কোলাহল,
মিলছে না তোমার দেখা-
তুমি কই?
নীলাকাশের দেহে আঁধারকালো মেঘ,
অভাঙ্গা ঘুমঘোরে অশ্লীল স্বপ্নরাজী
নড়েচড়া দেবীমহিমার শরীরী স্পর্শ,
তুমি কই?
আমাকে ঘুমে বিভোর রেখে,
সুর্যশোভিত ভরদুপুরেই খুঁজতে বেরুতে-
আজ তুমি কই?
শেষ বিকেলে বেড়াতাম আমি,
সুর্য্যরশ্মিটা বিরূপত্বে তখন,
মনগহীনে জগদ্দল পাথরচাপা সে কি অনুভব!
আজ তুমি কই?
প্রীতিমুগ্ধ চেনামুখগুলোর উপচে’পড়া ভিড়,
অন্ধকার সবুজ ঘাসের বুকে বসবে, মরণপণ মিলনমেলা- তোমায় চিরশায়িত করতে!
তবু মন মানছে না তুমি কই?
রাজপ্রসাদী শহর ছেড়ে ফিরে আসছি- আপনালয়ে,
রাত এগুচ্ছে না, নিশিভোরে কেবল মাওয়ার বুকফাঁটা কান্নার আওয়াজে পদ্মাও সেতো প্রায়মৃত।
সময় এগুচ্ছেনা, মটরবাইকে চড়ে আসা, তোমায় সহাস্যমুখ খানি দেখবার আশায়।
তোমায় পাবো তো-দিবে তো শেষ দেখা? দাও তুমি আকুতির প্রতি সাড়া?
আসছি আমি -তুমি কই?
ওহ! তুমি-তো ঘুমিয়ে গেছো,
ফিরবে না কখনো।
তবুও কি, আত্মার সন্ধান থেকে তোমার মুক্তি মিলবে কখনো?
মৃত্যুকে আলিঙ্গন করছো পবিত্র জায়নামাজে –
মহান সৃষ্টিধরের অনুকম্পায়!
ফিরে এলাম ঠিকঠাক মতো রাজপ্রাসাদী রাজধানীতে,
ভোরভাঙ্গা সকাল হতেই নিথর-নির্জীব গুলিস্তান হতে সহকারীকে নিয়ে ছুটলাম গন্তব্যে-
বারণ শুনলো না, আমাকে রেখেই সে ঘরে ফিরবে। উনিশ বছর ধরে ওর যেন কর্তব্য হয়ে উঠেছিল।
বরিশালের বাংলাবাঘের আবাসভূমিতে সহপাঠীকে কবরস্থ করতে ছুটেছিলা “ঢাকাইয়া বাবু” র মটরবাইকে।
দেখি পৌঁছে, অপেক্ষেয়মান আমার সহকারী- সেও নামে বাবু, ওদিন সে বাইক বিহীন বাবু। কি আর করা- গুলিস্তান ফ্লাইওভার হতে যাত্রা।
যাত্রাবাড়ী থেকে নেমে “সিএনজি” নামক ছোট্টখাট্টো গাড়ীটার ওপর পেছন হতে দূর পাল্লার মস্তবড় একটা গাড়ী চূর্ণ বিচূর্ণ করে দিল আচমকা। মুহূর্তে বজ্রাঘাত!
অলৌকিকতার আষ্টেপৃষ্ঠে বেঁধে দিল এ পাপীয়সী বান্ধার নাম, আমাকে বাঁচিয়ে রেখে!
নীরবে নিভৃতে ভস্মিত সিএনজিতেই প্রাণ সংহার হলো আমার সন্তানসম সহকারী টগবগে তরুণ বাবু।
পা কেটেও বাঁচানো গেলো না মধ্যবয়সী সুদর্শন নাম না জানা চালকের। ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা অসম্পন্ন রেখেই বাসায় ছুটে আসা।
আমার “কালা বাবুর মুখ মর্গে বসে যেন সাদা সহাস্যমুখে রূপ নিয়েছে।
স্বজনপ্রিয়তম বধুর অশ্রুজলপ্রপাতে কেটে গেছে কাছ-দূরের সব অন্ধকার।
মৃত্যু অপেক্ষা আর্তনাদের যে আরও কতো ভয়ঙ্কর তা ভুক্তভোগী ব্যতীত আঁচ করার সাধ্যকার?
(পাদটীকাঃ জান্নাসবাসী হও চিরবন্ধ তসলিম আর চিরসহকারী বাবু)